পলাশীর যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার কালো ছায়া আজ ঐতিহাসিক পলাশী দিবস

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন, ইতিহাসের এক বিভীষিকাময় দিন। আজ থেকে ঠিক ২৬৮ বছর আগে, নদিয়া জেলার পলাশীর আমবাগানে সংঘটিত হয়েছিল উপমহাদেশের ইতিহাস পরিবর্তনকারী এক যুদ্ধ পলাশীর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের সূচনা। আর বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায় প্রায় ২০০ বছরের জন্য।

নবাব সিরাজের প্রায় ৫০-৬৫ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত বাহিনী ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাত্র ৩-৪ হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হয়। কিন্তু সেই যুদ্ধে জয় নির্ধারিত হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে নয়—বরং ষড়যন্ত্রের গোপনচক্রে। নবাবের সেনাপতিরা—বিশেষ করে মীর জাফর, রায় দুর্লভ ও ইয়ার লতিফ—ইংরেজদের সাথে অগোচরে আঁতাত করে যুদ্ধ থেকে নিষ্ক্রিয় থাকে। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। নবাব পরাজিত হন, আর বাংলার শাসনভার চলে যায় বিদেশি শক্তির হাতে।

এই বিশ্বাসঘাতকতা শুধু একজন নবাবকে নয়—বাংলার অস্তিত্ব, সংস্কৃতি ও স্বাধিকারের ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দেয়। পলাশীর যুদ্ধ ছিল ভারতবর্ষে ব্রিটিশ আধিপত্যের সূচনা। এ যুদ্ধের পর কোম্পানি শাসনের মাধ্যমে উপমহাদেশে শুরু হয় শোষণ-নিপীড়নের দীর্ঘ ইতিহাস।

পলাশী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো—এই বিশ্বাসঘাতকতা ও জাতীয় আত্মবিস্মৃতির করুণ পরিণতি স্মরণ করা। এই দিন আমাদের শেখায়: স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে শুধু বাহ্যিক শত্রু নয়, অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতার বিপদ থেকেও সতর্ক থাকতে হবে।

আজকের দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালন করে। ইতিহাস সচেতন নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘পলাশী দিবস’ ঘিরে নানা বার্তা ছড়িয়ে দেন, যার উদ্দেশ্য—আগামী প্রজন্মকে জাতীয় ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।

এই দিনটি কেবল অতীতের শোক নয়—বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা। ২৩ জুন আমাদের মনে করিয়ে দেয়: ঐক্য, সততা ও দেশপ্রেম ছাড়া স্বাধীনতা ধরে রাখা যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top
🔴
ON AIR Radio Jhenuk 99.2 FM
🔊